বাংলাদেশের বহুল পরিচিত মাছের মধ্যে কাতলা বা কাতল অন্যতম, যার বৈজ্ঞানিক নাম Catla catla । দেশী রুই জাতীয় মাছের মধ্যে তুলনামূলক বৃহৎ আকৃতির মাথা ও মুখ আর প্রশস্থ দেহ এই মাছকে সহজেই অন্য মাছ থেকে আলাদা করে দেয়। উজ্জল ধুসর বর্ণের পৃষ্ঠদেশ ক্রমেই উভয় পাশে ও অঙ্কীয়দিকে রুপালি-সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। ছাই-কালো বর্ণের পাখনার এই মাছের আঁইশও তুলনামূলক বড়।
মজুত পুকুর নির্বাচন
মজুত পুকুরে বৃদ্ধির জন্য মাছ অনেক দিন ধরে রাখা হয়। একক চাষ, মিশ্র, কম্পোজিট, যে প্রথাতেই হোক না কেন, ছোট আঙুলে মাছ বা চারাপোনা (১৫ গ্রাম থেকে ৩৫ গ্রাম ) ছাড়া হয়ে থাকে। বিরল ক্ষেত্রে ধানিপোনাও ছাড়া হয়। প্রয়োজনভিত্তিক বা পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী এগুলিকে বাড়তে দেওয়া হয়। এক সাথে বা ক্রমান্বয়ে যে ভাবেই হোক না কেন, পুকুরে অনেক দিন ধরে রাখতে হয়। তাই মজুত পুকুরের জন্য সারা বছর জল থাকবে এমন জলাশয়ই আবশ্যক।
প্রয়োজনে পুকুর থেকে জল বের করা বা জল প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকলে ভালো। যে হেতু পুকুরে এক সাথে নানা প্রকারের মাছ চাষ করা হয়, জলের গভীরতা ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটারের (৪ ফুট থেকে ৬ ফুট) মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। পুকুরের পাড় বেশ উঁচু হওয়া দরকার। জলের উপরিতল থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) উঁচু হওয়া দরকার। যেন কোনও মতেই অতি বৃষ্টিতেও ভেসে না যায়। পুকুরের তলদেশের মাটি দোআঁশ বা এঁটেল-দোআঁশ হওয়া দরকার। পুরোপুরি বালি বা অতিরিক্ত পাঁক মাছ চাষে বিঘ্ন ঘটায়। পুকুর আয়তাকার এবং আয়তনে ১ বিঘা থেকে ১৫ বিঘা হতে (১০০০ বর্গ মিটার থেকে ১০০০০ বর্গ মিটার) হলে ভালো। পুকুরের চার ধার এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমন হওয়া দরকার যেন অবাধে সূর্যকিরণ জলে পড়তে পারে। পুকুরের জলের নিকটবর্তী পাড়ের ক্ষয়রোধের জন্য যেন ঘাস থাকে। পাড়ে ছোট ছোট গাছ লাগানো যেতে পাড়ে কিন্তু জলে ছায়া পড়ে এমন গাছ নয়। নারকেল বা তালগাছ লাগানো যেতে পারে উত্তর ও পশ্চিম দিকে। এরা খুব ছায়া করে না কিন্তু এদের শিকড় পুকুর পাড় সংরক্ষণে সাহায্য করে।
খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস:
কাতলা মাছ জলাশয়ের উপরের স্তরের মাছ। কেননা এদের মুখের উপরের চোয়াল ছোট হওয়ায় পানির উপরের স্তরের খাদ্য সহজেই গ্রহণ করতে পারে। এরা উভয়ভোজী প্রাণী। তবে প্রাণী প্ল্যাংকটন এরা অপেক্ষা উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন এরা বেশি খেয়ে থাকে। এদের খাদ্যের মধ্যে ক্রাস্টেসিয়া, শেওলা, রটিফার, কীটপতঙ্গ; অন্যতম। এরা সাধারণত রাতে আহার করে না। দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করার প্রবণতা এদের সবচেয়ে বেশি থাকে। এ মাছ খুব দ্রুত বর্ধনশীল। পরীক্ষায় দেখা গেছে এরা প্রতি মাসে ৭.৫ থেকে ১০ মি. মি. পরিমাণ বাড়াতে পারে। ধানক্ষেতে এদের বৃদ্ধি অত্যন্ত বেশি। কেননা ধানগাছ সংলগ্ন শৈবাল খাদ্য হিসেবে এদের অত্যন্ত পছন্দনীয়।
প্রজনন :
এরা রুই মাছের অনুরূপ বদ্ধ জলাশয়ে প্রজনন করে না এবং ২ বত্সরের মধ্যে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। সাধারণত বর্ষাকালে নদীতে ডিম দিয়ে থাকে। ডিমগুলো ভাসমান নয় এবং আঠালো নয়। রং হালকা লাল। ব্যাস ৪.৫ থেকে ৫.৪ মি. মি.। আমাদের দেশে এদের প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে রেণুপোনা উত্পাদন করা হয়ে থাকে। কাতলা প্রতি কেজি দেহের ওজনে ২০০০০ থেকে ২৪৬০০০টি ডিম উত্পাদন করে। বর্তমানে এদর কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বদ্ধ জলাশয়ে প্রজনন করানো হয়।
চারাপোনা ছাড়ার আগে মজুত পুকুর পরিচর্যা
জলজ উদ্ভিদ বা আগাছা মুক্ত করা
পুকুরে মাছের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষতি করে, গ্রাস কার্পের খাদ্য নয় এমন সব জলজ উদ্ভিদ ও শ্যাওলা নিধন করা দরকার। এরা মাছের চলাফেরা ও জীবনধারণে নানা ক্ষতি করতে পারে।
ক্ষতিকারক মাছের নিধন
পুকুরে অনেক মাছ জন্মে বা কোনও ভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রবেশ করে যারা মাছ চাষে ক্ষতি করে। এরা অন্যদের খাবারে ভাগ বসায়, চলাফেরায় অসুবিধা ঘটায়। অনেক রাক্ষুসে মাছ আছে যারা চাষের মাছকে বিভিন্ন বয়সে খেয়ে ফেলে। এদের নিধন করা দরকার। পুকুরে মহুয়া খোল প্রয়োগ করলে এর বিষক্রিয়ার ফলে সমস্ত আমাছা, ছোট বড় জলজ কীট সব মারা যাবে। বিঘা প্রতি সাধারণত ২০০ – ২৫০ কেজি মহুয়া খোল প্রয়োগ করা হয়।
এই খোলের পরিমাণ নির্ভর করে পুকুরে কতটা জল আছে তার উপর। আসল হিসাব ২৫০ পিপিএম হারে মহুয়া খোল প্রয়োগ করা প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রতি লিটার জলে ২৫০ মিলিগ্রাম খৈল। এই খৈলে স্যাপোনিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক আছে যা আমাছা বা জলজ কীটের মৃত্যু ঘটায়। এই রাসায়নিকের কার্যক্ষমতা ১০ / ১২ দিন অবধি থাকে। দু’ সপ্তাহ পর ওই জলাশয় মাছের বসবাসের উপযুক্ত হয়ে যায়।
অনলাইনে মাছের পোনা কোথায় পাওয়া যায়ঃ
হ্যাচারীর পাশাপাশি এখন অনলাইনেও অর্ডার করে কিনতে পারবেন যে কোন মাছের পোনা । মাছের পোনা কিনতে ক্লিক করুন নিচে দেয়া মাছের পোনা লেখার উপর।
You must log in to post a comment.