পাতাবাহার চাষ পদ্ধতি
পাতাবাহার চাষ পদ্ধতি

পাতাবাহার চাষ পদ্ধতি

@পরিচিতি@
ফুলের নামঃ পাতাবাহার
ইংরেজী নামঃ Croton
বৈজ্ঞানিক নামঃ Codiaeum variegatum
পরিবারঃ Euphorbiace
ঝোপ জাতীয় বিভিন্ন রং মেশানো সুন্দর পাতার সুদৃশ্য গাছ গুলি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।গাছ যদি বেশ
ঝোপালো হয়, এবং এদের আগা থেকে গোড়া পর্যন- পাতা যদি অটুট থাকে তবে পাতাবাহার গাছ বেশী
আকর্ষনীয় হয়।
@ব্যবহার@
বিশেষ রোদ পায়না এরকম বারান্দা বা ঘরের ভেতর সাজাবার কাজে পাতাবাহার বেশী ব্যবহৃত হয়।ঘরের প্রাঙ্গণ, রাস-ার পার্শ্ব, অফিস আদালত ইত্যাদি সাজাবার কাজে এদের যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। ডাল বা পাতা দ্বারা ফুলদানী সাজানো যায়। ছোট ধরনের পাতা, বাড়ে তাড়াতাড়ি এবং প্রচুর রোদ সহ্য করতে পারে এরকম পাতাবাহার দিয়ে খুব সুন্দর হেজ তৈরী করা যায়।
@উৎপাদন মৌসুম@
বছরব্যাপি
@জাত@
আলেকজান্দ্রা, আফ্রিকান প্রিন্স, চ্যালেঞ্জার, বিউটি, ডে- সিপ্র, জেমসাই, ওয়ারেনাই, ফেনজাই, ডাচেস অফ এডিনবার্গ ইত্যাদি।
@বংশ বিস্তার@
শাখাকলম ও গুটিকলম দ্বারা সহজে এর বংশবিস্তার করা যায়।
@টব তৈরী ও চারা রোপন@
পাতাবাহারের মাটি দুটি উপায়ে তৈরী করা যায়। প্রথম উপায়ে প্রথমে মেশাতে হবে সমান পরিমাণে গত বছরের চন্দ্রমল্লিকার সারমাটি ও কম্পোষ্ট। দ্বিতীয় উপায়ে প্রথম মেশাতে হবে তিনভাগ মাটি, দুভাগ গোবরসার,দুভাগ পাতাপচাসার ও একভাগ সাদাবালি। এই দুটি উপায়ে তৈরী করা চব্বিশ সেন্টিমিটার বা নয় ইঞ্চি টব পরিমান মাটিতে আরোও মেশাতে হবে দশ সেন্টিমিটার বা নয় ইঞ্চি টবের একটব দালানভাঙ্গা রাবিশ ও একটব হাড়ের গুড়ো। রাবিশ না পেলে তার পরিবর্তে দুচামচ কলিচুন মিশানো যেতে পারে। এরপর শাখাকলম ও গুটিকলম দ্বারা তৈরীকৃত চারা টবে রোপন করতে হ
@সার প্রয়োগ@
বর্ষার প্রথমে টবের গাছের গোড়ার মাটি সাত সেন্টিমিটার বা তিন ইঞ্চি গভীর করে সাবধানে তুলে সে জায়গা নতুন সারমাটি দ্বারা ভরে দিতে হবে। পানি দেবার জন্য মাটি বেশী ধুয়ে গেলে বাড়তি সারমাটি বছরের যেকোন সময় দেওয়া যেতে পারে। বর্ষার প্রথমদিকে একবার ও দুমাস পরে আর একবার একচামচ কলিচুন টবের মাটি সাধারণভাবে খুঁচে তাতে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাতাবাহারের সৌন্দর্য যথাসম্ভব বাড়ানোর জন্য গাছ লাগাবার দেড়মাস পর থেকে কাঁচাগোবরের তরলসার সপ্তাহে একবার করে দিতে হবে। শীতকালে এ সার ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই। পাতাবাহারে কোন রাসায়নিক সার ব্যবহারেরও কোন প্রয়োজন নাই।
@পরিচর্যা@
টবে পাতাবাহার লাগালে নয় ইঞ্চি টবে বা তার চেয়ে বড় টবে লাগাতে হবে। পাতাবাহারের জন্য হালকা ছায়া প্রয়োজন হলেও গাছ কিছুটা রোদ না পেলে পাতার রং ভাল হবে না। তাই টবের গাছকে সকাল নয়টা পর্যন- রোদে দিতে হবে। ঘরের ভিতর সাজাবার কাজে ব্যবহৃত গাছও রাতে খোলা জায়গায় ওেখে সকাল নয়টা পর্যন- রোদ দিতে হবে। কোন গাছই বেশীদিন ধরে ঘরের ভেতর রাখা উচিত নয়। গাছে পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন টবের মাটি সবসময়ই ভেজা ভেজা থাকে তবে গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে। গাছের পাতা সেপ্রয়ার বা পিকচারির সাহায্যে সপ্তাহে তিনচার দিন ভাল করে পাতার দুদিক ধুয়ে দিতে হবে এবং এ ধুয়ে দেবার কাজ সন্ধার দিকে করতে হবে। এতে পাতার রং ভাল হবে।
পোকামাকড়ের থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজনমত রোগর বা বিকল্প কোন ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাতাবাহার ঝোপালো করতে চাইলে গাছ বিশ সেন্টিমিটার বড় হলে মাথা ভেঙ্গে দেওয়া যেতে পারে।
@গাছ পাল্টানো@
পাতাবাহার বড় টবে লাগাবার সময় ধরে বছর দুই বেশ সুন্দর থাকে। এরপর গাছের গোড়ার বেশ বড় একটা অংশ পাতাবিহীন হয়ে যায়। দুটি ভিন্ন উপায়ে এসময় পাতাবাহারের পরিচর্যা করা যায়। প্রথমত গাছ যাতে নতুন করে ডালপালা ছাড়ে সেজন্য গাছের ছয় ইঞ্চি রেখে গাছের সব ডাল কেটে ফেলতে হবে । ডাল কেটে ফেলার সাত দিন পর গাছের গোড়ার বেশ কিছুটা মাটি সাবধানে তুলে ফেলে সেখানে নতুন সারমাটি দিতে হবে। ছয় মাসের মধ্যেই গাছটি নতুন ডালপালা ছেড়ে সাজাবার কাজে উপযুক্ত হয়ে উঠবে। এই পদ্ধতির কিছু অসুবিধা রয়েছে। গাছের গোড়া থেকে ছেটে ফেলার ফলে আবার সুন্দর হয়ে উঠতে ছয় মাস সময় লাগে। এ ছ’মাস গাছটি কোন কাজে লাগেনা। এছাড়া টবের উপরের সারমাটি পরিবর্তন করা গেলেও নিচের মাটিতে শিকড় দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে বলে টবের নিচের মাটি পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বর্ষার প্রথমে গাছের পাতার ঠিক নিচে এমনভাবে গুটিকলম বাঁধতে হবে যাতে সহজে চোখে না পড়ে। সব কয়টি বড় ডালেই কলম বাঁধতে হবে। যেহেতু সব পাতাবাহারের আগার পাতার আয়তন বড় ও রং উজ্জলতর হয় সেজন্য আগার ডাল কলম করে টবে লাগালে ভাল পাতাবাহার তৈরীর কাজ সহজ হবে। এরপর সব কটি কলম একসঙ্গে কেটে নিয়ে পাচ ইঞ্চি টবে লাগিয়ে দিতে হবে। এরপর পনেরদিন পরে বড় টব লাগিয়ে দিতে হবে।

জমিতে পাতাবাহার লাগালে টবের গাছের মত সুন্দর হয়না। তবুও এর একটি আলাদা সৌন্দর্য আছে। জমির জন্য এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেন হালকা ছায়া থাকে এবং পানি দাড়ায় না। জমির গাছে প্রত্যেক বর্ষায় কলম করা ভাল। এতে টবের জন্য উপযুক্ত গাছ পাওয়া যাবে এবং মূলগাছটি তেমন লম্বা হবেনা।

Similar Posts

X
%d bloggers like this: