মসুর ডালে প্রচুর আমিষ আছে। মাংস থেকে যে আমিষ পাওয়া যায় মসুর কলাই তা পূরণ করতে পারে। দেশে সব শ্রেণীর মানুষ আমিষের চাহিদা পুরণের জন্য মসুর কলাই খায়। মসুর কলাই উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করা যায়।
মসুর ডালের পুষ্টিগুণঃ
কলাই থেকে ২৪% প্রোটিন ৬০% শর্করা এবং ১.৩% স্নেহজাত পদার্থ পাওয়া যায়।
মসুর ডাল চাষে মাটিঃ
আমাদের দেশে সব ধরণের মাটিতেই মসুরের চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ মাটিতে মসুর কলাই ভালো জন্মে।
মসুর ডাল চাষের সময়ঃ
পুরো কার্তিক মাসেই মসুর বপন করা যায়। তবে পৌষের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বপন করতে পারলে ফলন বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে।
মসুর ডাল চাষের জাতঃ
আমাদের দেশে মসুর কলাইয়ের কয়েকটি জাত রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-বারি মসুর-১, বারি মসুর-২, বারি মসুর-৩ ও বারি মসুর-৪ ইত্যাদি।
বারি মসুর -১
১. গাছ মাঝামাঝি আকারের হয়ে থাকে এবং উপরিভাগের ডগা বেশ সতেজ।
২. গাছের পাতা গাঢ় সবুজ ও কান্ড হালকা সবুজ রঙের। ফুলের রঙ সাদা।
৩. বারি মসুর-১ জাতটির বীজের আকার স্থানীয় জাতসমূহের চেয়ে একটু বড়। এক হাজার বীজের ওজন ১৫-১৬ গ্রাম।
৪. আমিষের পরিমাণ ২৬-২৮ %।
৫. এ জাতের জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন।
৬. প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ২২০-২৪০ কেজি বারি মসুর জাতের ডাল পাওয়া যায়।
বারি মসুর -২
১. গাছের আকার মধ্যম ও গাছের উপরিভাগ সামান্য লতানো হয়।
২. গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ও পাতায় সরু আকর্ষী থাকে।
৩. কান্ড হালকা সবুজ ও ফুলের রঙ সাদা হয়ে থাকে।
৪. এক হাজার বীজের ওজন ১২-১৩ গ্রাম।
৫. আমিষের পরিমাণ ২৭-২৯%।
৬. এ জাতের জীবনকালে ১০৫ থেকে ১১০ দিন।
৭. প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৩০ কেজি বারি মসুর-২ জাতের ডাল পাওয়া যায়।
মসুর ডাল চাষের জমি প্রস্তুতঃ
মসুর কলাই জমি ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে। চাষের জন্য জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
মসুর ডাল চাষের বীজের হারঃ
বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি মশুর বীজ প্রয়োজন।
মসুর ডাল চাষের বীজ বপনঃ
মসুর কলাই জমিতে ছিটিয়ে ও সারিতে দুইভাবেই বপন করা যায়।লাইন বা সারি করে মসুর চাষ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায়। বীজ কিছুটা গভীরতায় বপন করতে হবে। তাহলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হবে এবং পাখি বীজ নষ্ট করতে পারবে না। মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকলে জমির উপরিভাগ থেকে কমপক্ষে ১.৫-২.৫ সে.মি. নিচে বীজ বপন করতে হবে।
মসুর ডাল চাষের সার প্রয়োগ সারের পরিমাণ
ইউরিয়াঃ ৬-৮ কেজি
টিএসপিঃ ১২-১৫ কেজি
এমওপি সারঃ ৫-৬ কেজি
অনুজীব সারঃ ৩০০ গ্রাম/ বিঘা
মসুর ডাল চাষের সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সমুদয় সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। যে জমিতে পূর্বে মশুর চাষ করা হয় নাই, সেখানে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৯০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অনুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইনকুলাম ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয় না।
মসুর ডাল চাষের সেচঃ
মাটিতে বীজ বপনের সময় যদি পানির পরিমাণ কম থাকে তাহলে বীজের অঙ্কুরোদগম নিশ্চিত করার জন্য বীজ বপনের আগে একটা হালকা সেচ দিতে হবে। এবং অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মসুর ডাল চাষের রোগ বালাইঃ
১. ইউরোমাইসিস ভিসিয়া ফেবি নামক ছত্রাকের আক্রমণে মসুরের মরিচা রোগ হয়। আক্রান্ত গাছের পাতায় বিভিন্ন আকারের ছোট ছোট মরিচা রঙ্গের গুটি দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামী ও কালো রঙ ধারণ করে। কান্ডেও এরকম লক্ষণ দেখা যায়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়।
২. ঢলে পড়া বা নেতিয়ে পড়া মসুরের একটা ক্ষতিকর রোগ। Fusarium oxysporaum নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে চারার বৃদ্ধি থেমে যায় এবং গাছের নিচের দিক থেকে ধীরে ধীরে উপরের দিকের পাতা হলুদ রঙ হয়ে বেঁকে যায়। চারার আগা নেতিয়ে পড়ে এবং চারা মারা যায়।
৩. জাব পোকা মসুরের পাতা, কান্ড, পুষ্পমঞ্জরি ও বাড়ন্ত শুঁটি থেকে রস শুষে খায়। বেশি আক্রমণের কারণে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। আক্রান্ত ফুল থেকে সাধারণত শুঁটি বের হয় না, হলেও সুস্থ ও সবল বীজ হয় না।
৪. ফল থেকে পোকার শুককীট প্রথমে পাতার সবুজ অংশ তারপর কুড়ি, ফুল এবং শুটি আক্রমণ করে। শুককীটগুলো শুটি ছিদ্র করে শরীরের কিছু অংশ শুটির ভেতর ঢুকিয়ে কুরে কুরে বীজ খায়।
প্রতিকারঃ
এসব রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে হবে।
মসুর ডাল চাষের পরিচর্যাঃ
বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে একবার আগাছা তুলে ফেলতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং মাটি ঝরঝরে রাখতে হবে।
ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফসল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। এ সময়ে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
You must log in to post a comment.