মিষ্টিকুমড়া চাষ পদ্ধতি
মিষ্টিকুমড়া চাষ পদ্ধতি

মিষ্টিকুমড়া চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ যা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট সবজি। কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মিষ্টিকুমড়া পাতা ও কচি ডগা শাক হিসেবে বেশ সুস্বাদু। পরিপক্ক ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। মিষ্টি কুমড়া ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

মিষ্টি কুমড়ার জাতঃ বারি মিষ্টি কুমড়া-১, বারি মিষ্টি কুমড়া-২ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি উন্নত জাত। বারি মিষ্টি কুমড়া-১ জাতটি ভাইরাস সহনশীল। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে সুইট স্পট, সুইট বেবি, সুইট বয়, সুইট ডায়মন্ড, সুপের সুইট-১, সুপার সুইট-২, রেশমী-১, রেশমী-২, ঢাকা-১, মায়া F1, সুপ্রিমা ইত্যাদি।

মাটির বৈশিষ্ট্যঃ সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদের জন্য উওম। মিষ্টি কুমড়ার জন্য মাটির সর্বোত্তম অমস্নতা ৫.৫-৬.৮।

চাষের মৌসুমঃ বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বছরের যেকোনো সময় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বোনা যায়। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বরের মধ্যভাগে বীজ বপন করা উত্তম।

বীজের হারঃ মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য বিঘা প্রতি ৬৫০-৮০০ গ্রাম এবং হেক্টরপ্রতি ৫-৬ কেজি পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয়।

চারা উৎপাদনঃ নার্সারিতে পলিবেগে চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম। পলিব্যাগে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে (৩ ইঞ্চি/৪ ইঞ্চি) অথবা (৮ সে.মি/১০ সে. মি.) আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। বীজ বপনের আগে ১৫-২০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বীজের অষ্কুরোদগম সহজ ও দ্রুত হবে। প্রতি ব্যাগে দুইটি বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুতে দিতে হবে।

চারা রোপণঃ

  • বীজ গজানোর পর ১৫-১৬ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।
  • পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেস্নড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।

মাদা তৈরিঃ

  • মাদার আকার হবে ( ৪৫ x৪৫ x ৪৫ )সে.মি.
  • মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২.৫ মিটার (রবি) এবং ৩.০ মিটার (খরিফ) মৌসুমে।
  • প্রতি মাদায় বীজের সংখ্যা হবে ৪-৫ টি

ফলধারণ বৃদ্বিতে কৃত্রিম পরাগায়ণঃ কৃত্রিম পরাগায়ণের মাধ্যমে মিষ্টিকুমড়া ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়। এর ফুল খুব সকালে ফোটে। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়ণ সকাল ৯ টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনাঃ মিষ্টি কুমড়ার মাছি পোকা।

লক্ষণঃ   

  • স্ত্রী মাছি পোকা মিষ্টি কুমড়ার কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে।
  • পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
  • এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০- ৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ

  • আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে।
  • সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও বিষটেপের ব্যবহার মাছিপোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
  • আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ১০ মিলি ( ১০ লি। পানিতে ৫ শতাংশ জমির জন্য ), সবিক্রণ ২ মিলি/লিটার, সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

রেড পামকিন বিটলঃ  

লক্ষণঃ

  • পুর্ণ বয়স্ক বিটল পাতা ও ফুল খায়। চারা গাছ অবস্থায় সর্বাধিক ক্ষতি করে থাকে।
  • গ্রাব ( বাচ্চা ) মাটির নিচে কান্ড ও শিকড় আক্রমণ করে।

প্রতিকারঃ

  • চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।
  • হাত জাল দিয়ে পোকা ধরা ও মেরে ফেলা। পাতার উপর ছাই ছিটিয়ে সাময়িকভাবে দমন করা।
  • চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারা গুলো ঢেকে দেওয়া।
  • আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি, মিপ্সিন, সপসিন ২ গ্রাম, একতারা ১ গ্রাম, সেভিন ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

জাব পোকাঃ

লক্ষণ:

  • জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়।
  • মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশবৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।

প্রতিকারঃ

  • ক্ষেত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার করা।
  • তামাকের গুঁড়া (১০ গ্রাম ), সাবানের গুঁড়া ( ৫ গ্রাম ) ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা
  • জৈব বালাইনাশক নিমবিসাইডিন বা বাইকা ২ মিলি/লি পানি ব্যবহার করা।
  • আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সানগর, ২ মিলি ডায়াজিনন মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে মিষ্টি কুমড়া পরিপক্ক বীজ বোনার পর থেকে ৭৫-৮০ দিন সময় লাগে।

ফলনঃ যত্ন সহকারে চাষ করলে ভালো জাতের মিষ্টি কুমড়া থেকে প্রতি একরে ১৮- ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।

Similar Posts

X
%d bloggers like this: