মুরগীর রোগ মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস বা সি আর ডি
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস বা ক্রনিক রেসপাইরেটরী ডিজিজ (সি আর ডি) একটি সংক্রামক রোগ। এটি শ্বাসতন্ত্রের একটি জটিল রোগ । বাংলাদেশের শীত কালে সাধারনত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এই দেশের আবহাওয়ায় সাধারনত নভেম্বর মাস হতে জানুয়ারি মাস পযন্ত এই রোগ বেশি হয়। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে প্রতি বছর এই সময়ে ব্যপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এটি Mycoplasma gallisepticum দ্বারা হয়ে থাকে। এটি সব বয়সের মুরগীর হয়ে থাকে তবে ৪-১০ সপ্তাহের মুরগির এই রোগ বেশি হয় ।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস কেন হয়?
১। মুরগী যদি এক জায়গায় গাদাগাদি করে তাহলে এই রোগ হতে পারে।
২।খামারে যদি বায়ু চলাচল ব্যাবস্থা ভালো না হয় ।
৩।লিটার ভেজা থাকলে ।
৪।ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য এই রোগ হয় ।
৫। খামারে অতিরিক্ত পরিমান অ্যামোনিয়া গ্যাস জমা হলে ।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস কিভাবে ছড়ায়?
১।মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস এক মুরগী হতে অন্য মুরগীতে ছড়ায়।
২।আক্রান্ত মুরগী হতে ডিমের মাধ্যমে বাচ্চাতে ছড়ায়।
৩।বাহক পাখির মাধ্যমে ছড়ায়।
৪।আক্রান্ত মুরগির খামারে ব্যাবহার করা বিভিন্ন জ়িনিষ পত্র, আসবাবপত্র, জুতা , পোষাক ইত্যাদির মাধ্যমেও ছড়ায়।
৫।খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায় ।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগের লক্ষণঃ
১। যেহেতু এটি শ্বাস তন্ত্রের রোগ সেহেতু হাচি, কাশি দেখা যাবে।
২।সবচেয়ে গুরুত্বপুণ লক্ষণ হল , মুরগী ঘড় ঘড় শব্দ করে,(রাত্রে বেশি ভালো বোঝা যায়) মুলত এই লক্ষণ দেখেই নিশ্চিত হওয়া যায়।
৩।আক্রান্ত মুরগী মুখ হা করে শ্বাস নেয়।
৪। খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়।
৫। ডিম উৎপাদন কমে যায়।
৬।শরীরের ওজন কমে যায়।
৭।নাক দিয়ে সদি পড়ে।
৮।মুখ ফুলে যাবে।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগের কিছু গুরুত্বপুণ তথ্যঃ
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগ হলে আক্রান্ত মুরগির দেহে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার জন্য রোগ সৃষ্টির ভালো পরিবেশ তৈ্রি হয়। বিশেষ করে কলিবেসিলোসিস এর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ইনফেক্সিয়াস ব্রঙ্কাই্টিস হলে খামারে জ়টিল অবস্থা সৃষ্টি হয়।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস হলে লেয়ার মুরগীর ক্ষেত্রে ১০-২০% ডিম উৎপাদন কমে যায় ।এছাড়া ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ১০-২০% ওজন কমে যায়।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগের পোস্ট মটেম লক্ষণঃ
খালি চোখে যা দেখা যায়ঃ
১।বায়ু থলি ঘোলাটে ও মোটা হয় ।
২।নাকের ছিদ্র ও শ্বাসনালীতে আঠালো মিউকাস থাকে ।
৩।নাকের ও মাথার সাইনাসে পনী্রের মত বস্তু পাওয়া যায়।
৪।তবে এ ধরনের পনীরের মত বস্তু ফুসসুস, হৃদপিন্ড, এবং বায়ুথলীতে পাওয়া যাবে।
৫।শ্বাসনালীতে প্রদাহ দেখা যাবে।
৬।অনেক সময় কলিজার উপরে সাদা সাদা স্পট দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ
১।সিপ্রফ্লোক্সাসিন ১সিসি/১লি এ ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে , অথবা এনরোফ্লোক্সাসিন দেয়া যেতে পারে।
২। তবে বাজারের ঔষধগুলোর মধ্যে রেনেটা কোম্পানীর মাইক্রোনিড মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস এর বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে।
৩। এছাড়া টাইলোসিন টারট্রেট ২০% ২.৫ গ্রাম/লি এবং ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড ১০% ১ গ্রাম /লি এ দেয়া যেতে পারে।
কিভাবে মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস প্রতিরোধ করা যায়?
১।খামারের জৈব নিরাপত্তা ভালো ভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
২।আক্রান্ত মুরগি সুস্থ মুরগি হতে আলাদা করে দিতে হবে।
৩।মাইক্রোপ্লাজমা আক্রান্ত হ্যাচারীর বাচ্চা হতে দূরে থাকতে হবে।
৪।সব সময় একজন ভাল রেজিস্টাড ভেটরিনারিয়ানের পরামশ নিতে হবে।
You must log in to post a comment.