লাল শাক আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় শাক। এর ইংরেজি নাম Red Amaranth ও বৈজ্ঞানিক নাম Anaranthus oleraceus.বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম বেশি লাল শাকের চাষ হয়। রান্নার পর শাকের রং গাঢ় লাল রঙ হয়। লাল শাক একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাক চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে লাল শাক চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চাষের সময় : সারা বছরই লাল শাক আবাদ করা যায়। তবে ভাদ্র-পৌষ পর্যন্ত বেশী চাষ হয়।
পুষ্টিগুন : লাল শাকে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
বাজার সম্ভাবনা : লাল শাক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ছোট বড় সবাই এই শাক খুব পছন্দ করে। যেহেতু এর চাহিদা সবার কাছেই আছে তাই লাল শাক চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। লাল শাক বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
লাল শাক উৎপাদন কৌশল :
জাত :
১। আমাদের দেশে বারি লালশাক-১ জাতের শাক চাষ ১৯৯৬ সালে অনুমোদন হয়।
২। এ শাকের পাতার বোটা ও কান্ড নরম ও উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।
৩। প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০টি পাতা থাকে।
৪। গাছের উচ্চতা ২৫-৩৫ সে.মি. এবং ওজন ১০-১৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
৫। এ শাকের ফুলের রঙ লাল এবং বীজ গোলাকার হয়।
৬। বীজের উপরিভাগ কালো ও কিছুটা লাল দাগ মেশানো থাকে। লালশাক চাষ পদ্ধতি
চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি :
জলবায়ু : সারাবছরই লালশাক চাষ করা যায়। তবে শীতের শুরুতে লাল শাকের ফলন বেশি হয়।
মাটির প্রকৃতি : প্রায় সব ধরণের মাটিতেই সারাবছর বারি লাল শাক-১ এর চাষ করা হয়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি লাল শাক চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।
জমি তৈরি ও বীজ বপন :
১। লাল শাক চাষের আগে জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ও মাটির অবস্থা বুঝে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হবে।
২। লাল শাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করা সুবিধাজনক।
৩। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সে.মি. রাখতে হবে।
৪। একটি কাঠি দিয়ে ১৫-২০ সে.মি. গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বুনে মাটি সমান করে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ : কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লাল শাক চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
চাষের সময় পরিচর্যা :
১। বীজ গজানোর এক সপ্তাহের পর প্রত্যেক সারিতে ৫ সে.মি. পর পর গাছ রেখে বাকি গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে।
২। নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
৩। জমির উপরের মাটিতে চটা হলে নিড়ানি দেওয়ার সময় তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ : উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৫০০ কেজি লাল শাক পাওয়া যায়।
You must log in to post a comment.