Sonali Murgi Palon – হাইব্রিড সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি শুরু করার আগে সোনালী মুরগি পালনের সমস্ত তথ্য সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকতে হবে। অন্যান্য বিদেশি মুরগির চেয়ে সোনালি মুরগীর রোগ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা অনের বেশি । সোনালী দের খাবার খরচ অনেকটা দেশি মুরগির মত প্রয়োজন হয় । এটি একটি কোরাস মুরগি । সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার সালঙ্গা থানার চরিয়া উজির গ্রামের রাশেদ পোল্ট্রি ও হ্যাচারি এই সোনালী মুরগিটি প্রথম তৈরি করা হয়েছে এবং সফল খামারের সারিতে এটির নাম নিবন্ধ করেছে।
আমেরিকান আরআইআর (RIR) প্রজাতির লাল মোরগ এবং মিশরীয় কালো ও সাদা ফাউমি মুরগির কোরাস করে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে একটি নতুন জাতের জন্ম নিয়েছে , বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছে সোনালি মুরগি । বাংলাদেশে সোনালী মুরগীর উদ্ভাবক সাবেক প্রাণি সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. শাহ-জামাল । আমাদের দেশের আবহাওয়ায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। বেশী ডিম পাবার আশায় এই মুরগি তৈরী করা হয় । সোনার মুরগির খামার খুব ভাল কারন এদের বাজারে সব সময় ভাল দাম পাওয়া যায় । আমাদের দেশের বেকার যুব সমাজ যদি একে একে খামার গড়ে তুলতে এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে খামারের যত্ন নিতে পারে তবে আমাদের দেশ থেকে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের পরিমাণ কম হতে পারে।
সোনালি মুরগি বৈশিষ্ট্য ;
সাধারণত ৬০ দিনের হিসাব করে সোনালি মুরগিকে পালন করা হয় । সোনালি মুরগির গায়ের রং সাধারণত লাল,কাল,সাদা ,হলুদ ধরনের হয়ে থাকে । আমাদের দেশের আবহাওয়াতে এই মুরগি পালন অনেক উপযোগী । আকারে এরা মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে । সোনালী মুরগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দেশি । ডিম ও মাংসের জন্য এই মুরগি পালন করা হয়ে থাকে । এরা বছরে ১৫০ টি থেকে ২০০ টির বেশি ডিম দেয় । ৬০ দিনে মুরগির ওজন আসে প্রায় ৭০০-৭৫০ গ্রাম । প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ – মুরগির ওজন সাধারণত ১.৫ কেজী থেকে ২.৫ কেজী হয়ে থাকে ।
সাধারণত ৬০ দিনের হিসাব করে হাইব্রিড মুরগি পালন করা হয় । আমরা জানি, যখন যে পণ্য চাহিদা মত পাওয়া যায়না , তখন তার চাহিদা মেটানোর জন্য তৈরী করা হয় হাইব্রিড । তেমনি ভাবেই সোনালি মুরগির চাহিদা মেটানর জন্য তৈরী করা হল হাইব্রিড সোনালি মুরগি । এখন বেশির ভাগ খামারিরা হাইব্রিড সোনালি মুরগি চাষ করছে কারন এদের খাবার খরচ একই পরিমানের কিন্তু সোনালি মুরগির চেয়ে হাইব্রিড মুরগি বেশি বাড়ে । মাংশ উৎপাদন কারী জাত হিসাবে এই মুরগি জাত তৈরী করা হয়েছে । প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ – মুরগির ওজন সাধারণত ২ কেজী থেকে ৩.৫ কেজী হয়ে থাকে । এদের গায়েরর রং সাধারণত লাল,কাল,সাদা ,হলুদ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । হাইব্রিড সোনালি মুরগির ১ দিনের বাচ্চার ওজন ৩০ গ্রাম থেকে ৩৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৬০ দিনে মুরগির ওজন আসে প্রায় ৯০০ থেকে ৯৫০ গ্রাম পর্যন্ত ।
সোনালি মুরগির বাসস্থান ;
সোনালি মুরগির বাসস্থান তৈরীতে মুরগি প্রতি .০.৮৫০ থেকে ০.৯৫০ বর্গ ফুট জায়গা প্রদান করতে হয় । আরো বেশি মুরগি ধরানোর জন্য আপনি নিচ থেকে ১ফুট থেকে ১.৫ ফুট উপরে বাশ বেধে দিতে পারেন তাহলে আপনার তুলনা মুলক বেশি মুরগি পালন করতে পারবেন ।
স্থান নির্বাচন করা সব থেকে একটি গুরুত্ব পূর্ণ একটি বিষয় । সর্বপ্রথম উচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে কারণ বৃষ্টি হলে খামারে পানি জমতে পারে । বাশ , টিন ,তার ইত্যাদি দিয়ে ভাল ভাবে বাসস্থান তৈরী করতে হবে । লোকালয় থেকে দুরে তৈরী করতে হবে যাতে মুরগির রোগ কম হয় । যাতায়াত ব্যাবস্থার সুবিধা থাকতে হবে যাতে করে সহজে গাড়ি যেতে পারে আপনার খামারে । পানি ,খাবার , বিদ্যুৎ এর সুবিধা থকতে হবে ।
ব্রুডিং-
নতুন ফোটা মুরগির বাচ্চা গুলির শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাই পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে মুরগির শরীরের তাপমাত্রাকে সমন্বয় করতে এই ধরণের বাচ্চা গুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি স্থানে রেখে ২ থেকে ৩ সপ্তাহের জন্য কৃত্রিমভাবে তা দিতে হয়। এই কৃত্রিম তাপকে ব্রুডিং বলা হয়। ব্রুডিংয়ের উদ্দেশ্য হ’ল বাচ্চা গুলির জন্য একটি আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।
ব্রুডিংয়ের সময় পরিবেশ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারলে মুরগির শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস, খাদ্য রূপান্তর হার হ্রাস, এবং অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাবে। ফলস্বরূপ খামারের লাভ হ্রাস পাবে। সব জাতের হাঁস-মুরগির ব্রুডিং ম্যানেজমেন্ট প্রায় একই রকম।
ব্রুডিং এর তাপমাত্রা
- ১ম সপ্তাহে ৯৫’ ফারেনহাইট
- ২য় সপ্তাহে ৯০
- ৩য় সপ্তাহে ৮৫
- ৪থ সপ্তাহে ৮০
- ৫ম থেকে শেষ পর্যন্ত ৭৫ ‘ ফারেনহাইট
- লিটার ব্যাবস্থাপনাঃ
মুরগির বাচ্চা ব্রুডিং এর সময় সর্বদা লিটারে পালন করা হয়। এক্ষেত্রে বাচ্চা শেডে আসার আগে লিটারের উপাদান যেমন, তুস, কুড়া ,বালি ,ছায় ইত্যাদি ছড়িয়ে দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। শুকনো, পরিষ্কার লিটারের উপাদান ১ থেকে ২ ইঞ্চি পুরু মেঝেতে ছড়িয়ে দিতে হবে। লিটার উপাদানগুলি কোনও ধরণের দূষিত কিনা তা দেখে ব্যবহার করা উচিত। কীটনাশক লিভার এবং কিডনির ক্ষতি করে এবং পেশী এবং ফ্যাটগুলিতে জমা হয়। ছত্রাক গুলি বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বাচ্চা গুলি যখন শ্বাস নেয় তখন তারা সংক্রামিত হয় এবং মারা যায়। যদি লিটার কোনও কারণে ভেজা হয়ে যায় বা অন্য কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে শুকনো লিটারটি দ্রুত প্রতিস্থাপন করা উচিত।
লিটার হিসাবে আমাদের দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় হ’ল চাল কুঁচি এবং কাঠের গুঁড়ো। কেউ কেউ চালের কুঁচি ও কাঠের গুঁড়ো মিশ্রণ ব্যবহার করে। শীতে লিটার ২ ইঞ্চি এবং গ্রীষ্মে ১ ইঞ্চি করা ভাল, কারণ যখন লিটারটি পাতলা হয়, তখন বাচ্চার শরীরের তাপ লিটারে নিয়ে নেই যা মুরগির বাচ্চা জন্য অনেক ক্ষতি। এই লিটারের কারনে বেশির ভাগ বাচ্চার ঠান্ডা গরম লেগে থাকে । লিটার ভেজা থাকলে ডায়রিয়া হয়, ডায়রিয়া হলে গামবোরা ও রাণীক্ষেত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লিটার মুরগির পায়খানা থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে ক্ষতিকারক জীবাণু গুলির বিস্তারকে বাধা দেয় এবং এটি মুরগির জন্য আরামদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করে এবং প্রচণ্ড শীতের সময় উষ্ণতা সরবরাহ করে।
- সোনালি মুরগির বিভিন্ন ধরেনের রোগ বালাই হয়ে থাকে যেমনঃ-
- রানিক্ষেত রোগ – New Castle Diseases
- এভিয়ান ফ্লু ভাইরাস বা বার্ড ফ্লু
- পুলোরাম রোগ – Pullorum Diseases
- ফাউল কলেরা – Fowl cholera
- গামবোরা রোগ – Infections Bursal
- ইনফেকশাস কোরাইজা – Infectious Coryza
- ওমফ্যালাইটিস – Omphalitis
- নেক্রোটিক এন্টারাইটিস – Necrotic Enteritis **
- কলিব্যাসিলোসিস – Colibacillosis
- এভিয়ান মাইকোপ্লাজমোসিস – Avian mycoplasmosis
- ব্রুডার নিউমোনিয়া – Aspergillosis
- বসন্ত রোগ
- হিট স্ট্রোক রোগ
- আমাশয় রোগ ইত্যাদি
- সোনালি মুরগির টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদানঃ
সোনালি মুরগি আমাদের দেশের জলবায়ুর সেরা অভিযোজিত মুরগি। অতএব, এই মুরগি খুব রোগ সহনকারী, অর্থাৎ, রোগটি কম। তবুও ঝুকি বাচাতে সময়সূচী অনুসারে টিকাদান করতে হবে।
সোনালি মুরগির টিকা দেওয়ার নিয়ম ;
সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে নিম্নের ছকটি ভালভাবে দেখুনঃ
৩-৫ দিন রানীক্ষেত ভ্যাকসিন আইবি+এনডি এক চোখে এক ফোঁটা ১০-১২ দিন গামবোরো ভ্যাকসিন আই বি ডি এক চোখে এক ফোঁটা ১৮-২২ দিন রানীক্ষেত ভ্যাকসিন এনডি এক চোখে এক ফোঁটা ২৪-২৬ দিন গামবোরো ভ্যাকসিন আই বি ডি এক চোখে এক ফোঁটা ৪৪-৪৮ দিন রানীক্ষেত ভ্যাকসিন (ডিমের জন্য প্রযোজ্য) এনডি এক চোখে এক ফোঁটা সোনালী মুরগির ঠোটাকাটা ;
মুরগি জাতে অন্য মুরগি কে ঠুকাতে না পারে সে জন্য সকল মুরগিকে প্রথম ৭-১০ দিনের দিন ঠোট কেটে দিতে হবে , আবার ১০-১২ সপ্তাহে পরে সকল মুরগিকে পুনরাই ঠোটকাটতে হবে যাতে ঠুকা-ঠুকি বা ডিম খেয়ে নিতে না পারে।
You must log in to post a comment.