Description
নাম : হাইব্রিড ধুন্দল
ব্র্যান্ড : এ সি আই বীজ
ওজন : ৫ গ্রাম
জাত : হাইব্রিড
বীজ বপনের সময় : ফেব্রুয়ারী মাসে ধুন্দুল চাষের প্রস্তুতি নেয়া যায়
সর্বনিন্ম অডার :
বিবরন
ধুন্দুল আমাদের দেশে সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে দুই ধরণের ধুন্দুল পাওয়া যায়। একটি হল যেটা আমরা সাধারণত খাই। এর শাঁস তিতা নয় সুস্বাদু এবং নরম। অন্যটি হলো বন্য ধুন্দুল, যাকে তিতপল্লা বলা হয়। এর পাকা ফল শুকিয়ে স্পঞ্জের মতো গায়ে সাবান মাখার খোসা তৈরি করা হয়। আসুন জেনে নেই কিভাবে ধুন্দুল চাষ করতে হবে।
ধুন্দুল চাষে প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
ধুন্দুল চাষে জমির প্রথম শর্ত হচ্ছে উঁচু, পানি জমে থাকে না, গাছের কোনো ছায়া থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। ধুন্দুলের বাড়বাড়তি ও ভালো ফলনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার হয়। উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ধুন্দুল চাষের জন্য উত্তম। বীজ গজানো ও গাছের বৃদ্ধির জন্য গরম আবহাওয়ার দরকার হয়। ছায়া জায়গায় গাছ ভাল হয় না।
ধুন্দুল এর উল্লেখযোগ্য জাত
আমাদের দেশে সাধারনত ধুন্দুলের দুই ধরণের জাত রয়েছে। তাঁর মধ্যে একটি হল দেশি জাত ও অন্যটি হল হাইব্রিড জাত। দেশি জাতের ধুন্দুল এর আকার অনেক ছোট হয় এবং দ্রুত আঁশ হয়ে যায় এবং এর স্বাদ হয় তিতা। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের ধুন্দুল আকারে অনেক বড়, লম্বা, সুস্বাদু এবং নরম হয়। তাই আমাদের দেশি জাতের ধুন্দুল বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু হাইব্রিড জাতের ধুন্দুল পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর মধ্যে ফুজিয়ান ও গীতা অন্যতম।
ধুন্দুল চাষে কিভাবে চারা তৈরি করবেন
চারা লাগানোর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ধুন্দুলের চারা তৈরি করে নিতে হবে। ভালো জাতের বীজ নির্বাচন করতে হবে। বীজ বপনের ২৪ ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পলিব্যাগে, কলার খোলে বা বেড তৈরি করে চারা তৈরি করে নেয়া যায়। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ পুঁতে দিতে হবে। তবে মনে রাখবেন পলিব্যাগে চারা তৈরি করা নিরাপদ। এক্ষেত্রে অর্ধেক গোবর ও অর্ধেক মাটি পলিব্যাগে ভরতে হবে। এরপর উক্ত মাটি দ্বারা পলিব্যাগ ভরতে হবে। পলিব্যাগের মাটি ভরাট করার পরে রেখে দিতে হবে। এবং উপরে ছাউনি দিয়ে দিতে হবে। যাবে রোদ, বৃষ্টি না লাগে। মাঝেমধ্যে পলিব্যাগের মধ্যে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিয়ে পলিব্যাগের মাটিতে চারা লাগানোর জো আনতে হবে। এরপর প্রতিটি ব্যাগে ২ থেকে ৩ টি চারা রোপন করতে হবে। চার দুপাতা হলে প্রতি পলিব্যাগে একটি করে চারা রেখে বাকি চার তুলে ফেলতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১.৫- ২.০ কেজি হিসাবে বীজ প্রয়োজন হয়। সরাসরি মাদায় বিজ বুনে ও চারা লাগিয়ে ধুন্দুলের চাষ করা যায়।
ধুন্দুল চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন
ফেব্রুয়ারী মাসে ধুন্দুল চাষের প্রস্তুতি নেয়া যায়। ধুন্দুল গাছের চার লাগানোর পূর্বে ৩- ৪ বার গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আগাছামুক্ত ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। চাষের সময় জমিতে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেসব জমি উঁচু ও বর্ষার পানি আটকে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। ধুন্দুলের চাষ করে ক্ষেত্রে বেড তৈরি করে দিতে হবে। এবং প্রতি বেডের মাঝে সারি করে ২ মিটার দূরে দূরে সবদিকে ৫০ সেন্টিমিটার মাপে গর্তকরে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরি করে সেখানে সরাসরি দুইটি করে বীজ বুনে দেওয়া যায়। ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। হেক্টর প্রতি ৩ থেকে ৪ কেজি বা শতক প্রতি ১২ থেকে ১৫ গ্রাম বীজ লাগে। বীজের আঁকারের দ্বিগুণ গভীরে বীজ বপন করা ভাল। পলিব্যাগ থেকে চারা অপসারনের সময় পলিব্যাগে পানি সেচ দিতে হবে। তাহলে চারা অপসারনের সময় চারার শেকড় ভেঙে বের হবে না বা নষ্ট হবে না। বিকেলবেলা চারা রোপন করতে হবে এতে চারা কম মরে। চারা লাগানর পরে চারার গোঁড়া মাটি দিয়ে টিপে দিতে হবে। এরপর পানি সেচ দিতে হবে।
ধুন্দুল চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
ধুন্দুলের বেশি ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মমতো সার দিতে হবে। প্রতি মাদায় পচা গোবর, ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি মিলিয়ে ৫-৬ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোমতো মিশিয়ে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
ধুন্দুল চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশন
ধুন্দুল চাষের সময় সাধারনত ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি বেশি হলে সেচ দেয়ার দরকার নেই। মাটিতে রস কম থাকলেই সেচ দেয়া প্রয়োজন। তবে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া উত্তম। খেয়াল রাখবেন ধুন্দুল গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায়। ফেব্রুয়ারীর মাসের শেষের দিক থেকে এপ্রিল মাসের শেষের দিক পর্যন্ত খরা থাকে। এ সময় ৫-৬ দিন অন্তর অন্তর মাদায় সেচ দিতে হবে।
ধুন্দুল চাষে আগাছা ও নিড়ানি
জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। প্রতিবার ইউরিয়া সার দেয়ার পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। গাছ লতানোর জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ একটু বড় হলেই মাচা তৈরি করে দিতে হবে। রোগবালাই দমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ধুন্দুল চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই
ধুন্দুলের গাছে অনেক ধরণের রোগ হয়ে থাকে। রোগাক্রান্ত ও মরা পাতা সংগ্রহ করে পুঁতে ফেলতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা অবস্থায় রেড পাম্পকিন বিটিল চারার পাতা ঝাঁঝরা করে খেয়ে ক্ষতি করে। চারার কচি পাতা ও মাথা খেয়ে এরা ক্ষতি করে। ছাই ছিটিয়ে বা মশারির জাল দিয়ে বীজতলায় চারা ঢেকে রেখে এ পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা করা যায়। এছাড়া কাঁটালে পোকাও গাছে আক্রমণ করে থাকে।
বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। শরৎ কাল পর্যন্ত ধুন্দুল তোলা যায়। প্রতি শতকে ফলন ১২০-১৪০ কেজি এবং একরপ্রতি ফলন ১২-১৪ টন। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের ধুন্দুল তুলতে হবে। খোসা শক্ত হয়ে এলে তা আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না। প্রতি হেক্টরে ৫০,০০০টি ধুন্দুল উৎপাদন করা সম্ভব।
Reviews
There are no reviews yet.