Description
নাম : বেগুন
ব্র্যান্ড :ইন্ডিয়ান
জাত : ও পি
ওজন : ১০ গ্রাম
বীজ বপনের সময় :
বিবারণ
বেগুন বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় সবজি। আমাদের দেশে সারা বছরই বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। স্বাদ ও পুষ্টিমান বিবেচনায় বেগুন একটি ভালো সবজি। আসুন জেনে নেই কিভাবে আপনি এই বেগুনের চাষ করবেন।
বেগুন চাষে প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
বেগুনকে সাধারনভাবে উষ্ণ জলবায়ুর ফসল হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণত বেগুন ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালো ফলন দেয়। এর কম বা বেশি তাপমাত্রায় বেগুনের ফুল ও ফলধারণ ব্যাহত হয়। বাংলাদেশে শীতকালীন জলবায়ু বেগুন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এর কারণ হল বেগুন অত্যাধিক তাপমাত্রায় ভালো ফলন দেয় না। উচ্চতাপমাত্রায় বেগুনের ফুল ও ফল উৎপাদনে বিঘ্নিত হয় এবং এসময় অনিষ্টকারী পোকার আক্রমন বেশি হয়। বাংলাদেশে রবি বা শীত মৌসুমে বহু জাতের বেগুনের চাষ করা যায়, কিন্তু গ্রীষ্মকালের জাতের সংখ্যা কম। গ্রীষ্ম বা খরিপ মৌসুমে অনেকজাতের গাছে ফুলই হয় না অথবা ফুল ফুটলেও ঝরে পড়ে। আমাদের দেশের সব রকমের মাটিতে বেগুন চাষ করা যায় এবং ভাল ফলনও দিয়ে থাকে। তবে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। বেলে দোআাঁশ বা দোআাঁশ মাটিই এই চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।
বেগুন এর উল্লেখযোগ্য জাত
বেগুন সারা বছর ধরে চাষ করা হলেও সব জাত সব সময় হয় না। বেগুন বাংলাদেশের স্থানীয় ফসল হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের চাষ হয়। শীতকালীন জাতগুলো আলাদা। এসব জাত কেবল শীতের সময়ই ভালো ফলন দেয়। আমাদের দেশের স্থানীয় জাতসমুহ হল- ইসলামপুরী(ময়মানসিংহ), নয়নকাজল(যশোর), সাহেব বেগুন(পটুয়াখালী), খটখটিয়া(ময়মানসিংহ), উত্তরা(রংপুর), রাখাইন বেগুন (পটুয়াখালী ও বরগুনা), প্লাস্টিক বেগুন(বেগুন), মাকড়া(যশোর), উত্তরা(সারাদেশ) ইত্যাদি। বর্তমানে অধিক ফলনশীল বেশকিছু হাইব্রিড জাত আছে তাঁর মধ্যে অন্যতম হল গালিভার, গ্রীনবল-১, শুকতারা, কাজলা এক্সট্রা লং, হীরা, তারাপুরী ইত্যাদি। এছাড়াও আমাদের দেশে আরও কিছু উন্নত জাতের বেগুন আছে তাঁর মধ্যে কেজি বেগুন, তাল বেগুন, নয়নতারা, ঝুমকা, কুলি বেগুন, ভোলানাথ বারি বেগুন ইত্যাদি।
কিভাবে বেগুনের চারা তৈরি করবেন
বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে পরে মূল জমিতে চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের জন্য উর্বর জমি যেখানে বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না ও সবসময় আলো-বাতাস পায় এমন বীজতলা নির্বাচন করতে হবে। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য বীজতলায় বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হল আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস। প্রথম বীজতলায় ঘন করে বীজ ফেলতে হবে।
বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হবে। এতে চারা সুস্থ্য ও সবল হয় এবং ফলন ভাল হয়। মাটিতে বেগুনের বীজ রোপোনের ৬-৮ দিনের মাথায় চারা গজাতে শুরু করে। প্রতি শতাংশ জমিতে বেগুনের বীজের প্রয়োজন হয় ২ গ্রাম। প্রথম বীজতলায় ঘন করে বীজ ফেলতে হবে। বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হবে। এতে চারা সুস্থ্য ও সবল হয় এবং ফলন ভাল হয়।
বেগুন চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন
বেগুন চাষের জন্য উর্বর জমি যেখানে বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না ও সবসময় আলো-বাতাস পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। এরপর উক্ত জমিতে ৪ থেকে ৫ বার চাষ দিয়ে তারপর মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ৫-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সেমি দূরত্বে সারি করে ৬০ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হয়। লক্ষ্যণীয় চারার গোড়া রস ধরে রাখার জন্য চারার আটির গোড়াটি কাদার মধ্যে ডুবিয়ে নিতে হবে। তারপর চারা রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন জাতের বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব ১০-১৫ সেমি কম বেশি করা যেতে পারে। জমিতে চারা রোপনের পর চারা যাতে শুকিয়ে না যায় সেজন্য সেচ দিতে হবে।
বেগুন চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
বেগুন চাষ করার ক্ষেত্রে বেগুন ক্ষেতে পরিমাণ মত সার দিতে হবে। বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে থাকে। বৃদ্ধির প্রথমের দিকে খাদ্যের অভাব হলে গাছ দ্রুত বাড়ে না এবং পরে উৎপাদন কমে যায়। শেষ চাষের সময় প্রতি শতাংশ জমিতে ৪০ থেকে ৬০ কেজি গোবর সার, ৮০০ গ্রাম টিএসপি সার ও ৮০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। চারা লাগানো ১০ থেকে ১৫ দিন পর ফল ধরা আরম্ভ হলে ফল আহরণের মাঝামাঝি সময় জমিতে সার দিতে হবে। বেগুন গাছে ইউরিয়া সার নিয়মিত কিস্তি করে দিতে হবে। প্রথম কিস্তি চারা লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর। দ্বিতীয় কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় কিস্তি বেগুন সংগ্রহের মাঝামাঝি সময় দিতে হবে।
বেগুন চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশন
বেগুন চাষের জন্য সেচ অত্যন্ত জরুরি। বেগুনের শিকড় মাটির খুব গভীরে যায় না বলে অধিক ফলন পাওয়ার জন্য ঘন ঘন সেচ দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া জমিতে রস না থাকলে সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে।
বেগুন চাষে আগাছা ও নিড়ানি
আগাছা খাদ্য, পানি ও আলোর জন্য ফসলের সাথে প্রতিযোগিতা করে। তাছাড়া আগাছা পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করে। তাই বেগুনের জমিতে আগাছা দেখা দিলে মাঝে মাঝে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। এতে বেগুনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
বেগুন চাষে পোকামাকড় ও রোগদমন
বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এছাড়াও আরও অনেক ধরণের পোকা বেগুন গাছের ক্ষতি করে থাকে। এর মধ্যে আছে কাঁটালে পোকা, বিছা পোকা, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, কাটুই পোকা, থ্রিপস, পাতা মোড়ানো পোকা, ইত্যাদি পোকা বেগুন ক্ষেতের অনেক ক্ষতি করে থাকে। এছাড়াও বেগুন গাছে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হতে পারে। যেমন ঢলে পড়া রোগ, গোঁড়া পচা রোগ, ফল পচা রোগ, চারা ধসা রোগ ইত্যাদি রোগ বেগুন গাছের মারাত্মক ক্ষতি করে। এসব কোন ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে সঠিক মানে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এবং নিয়মিত বেগুন গাছের যত্ন নিতে হবে।
পরিপক্ব হওয়ার আগেই বেগুন গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ফসল এমনভাবে সংগ্রহ করতে হবে যাতে বেগুন যথেষ্ঠ বড় হয় কিন্তু বীজ শক্ত হয় না। সাধারনত বেগুন গাছে চারা লাগানোর ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং এর এক মাসের মধ্যে বেগুন খাওয়ার উপযোগী হয়।
বেগুনের ফলন
সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে জাত ভেদে হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৬৫ মেট্রিকটন বেগুনের ফলন পাওয়া সম্ভব।
Reviews
There are no reviews yet.